হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, পৃথিবী আজ অশান্তির আগুনে দগ্ধ-যুদ্ধ, সন্ত্রাস, বৈষম্য ও বিদ্বেষ মানবসভ্যতাকে গ্রাস করছে প্রতিনিয়ত। জাতি-ধর্ম-বর্ণের বিভেদ যেন মানবতার মৌলিক বন্ধনকেই দুর্বল করে দিচ্ছে। এমন এক সংকটময় সময়ে আমাদের সামনে পথপ্রদর্শক হয়ে দাঁড়ান মহানবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সা.)। তাঁর জীবন ও শিক্ষা মানবজাতিকে দেখিয়েছে কিভাবে দয়া, সহমর্মিতা, ন্যায়বিচার ও ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যায়।
মহানবী (সা.) শুধুমাত্র ধর্মীয় নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন মানবতার মুক্তির দিশারি। তিনি শিখিয়েছেন-মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে, নিপীড়িতের অধিকার ফিরিয়ে দেবে, অন্যের প্রতি করুণা ও ক্ষমাশীলতার হাত প্রসারিত করবে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার মূলমন্ত্র নিহিত রয়েছে তাঁর আদর্শে। তাই আজকের যুগে, যখন মানবসভ্যতা চরম সংকটে, তখন তাঁর শিক্ষা বাস্তবায়ন করাই শান্তি ও মানবকল্যাণের একমাত্র নির্ভরযোগ্য পথ।
সালামুন আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা, মাওলানা সাহেব, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর প্রেক্ষাপটে আমরা যখন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন স্মরণ করি, তখন তাঁর শিক্ষা থেকে আজকের বিশ্ব কী বার্তা পেতে পারে?
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন মাওলানা আলী নাকী, ধন্যবাদ। আসলে মহানবী (সা.)-এর আগমন মানবজাতির জন্য ছিল আলোকোজ্জ্বল এক দিশারি। তিনি এমন এক সময়ে জন্মগ্রহণ করেন, যখন সমাজ ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন-অন্যায়, অবিচার, হিংসা ও বৈষম্যে ভরা। সেই সমাজকে তিনি পরিবর্তন করেছিলেন দয়া, ন্যায়বিচার, সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে। আজকের বিশ্বও নানা সংকটে নিমজ্জিত-যুদ্ধ, সন্ত্রাস, অর্থনৈতিক বৈষম্য, ধর্মীয় বিদ্বেষ। এ সমস্যাগুলির একমাত্র সমাধান মহানবীর শিক্ষা অনুসরণ করা।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নবীজির শিক্ষার মূল দিক কোনটি বলে আপনি মনে করেন?
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন মাওলানা আলী নাকী, সবচেয়ে বড় দিক হলো মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা। নবীজির দাওয়াত ছিল-“মানুষ মানুষকে ভালোবাসো, তার অধিকার দাও।” তিনি বলেছেন, "কোনো আরব অ-আরবের উপর শ্রেষ্ঠ নয়, কোনো শ্বেতাঙ্গ কৃষ্ণাঙ্গের উপর শ্রেষ্ঠ নয়; বরং যার তাকওয়া বেশি, সে-ই আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ।" আজ যদি বিশ্ব এই নীতি মেনে চলে, তবে জাতি-বর্ণ-ধর্মের বিভেদ দূর হয়ে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
আজকের যুগে অনেকেই মনে করেন ধর্মই দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছে। এ বিষয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী?
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন মাওলানা আলী নাকী, আসলে ধর্ম কখনোই দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে না। দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে মানুষের ভুল ব্যাখ্যা ও সংকীর্ণ মানসিকতা। মহানবী (সা.) সর্বদা শান্তির বার্তা দিয়েছেন। তিনি অমুসলিম প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন, এমনকি শত্রুকেও দয়া ও ক্ষমার সাথে আচরণ করেছেন। তাই প্রকৃত ইসলাম মানেই শান্তি। যদি সবাই প্রকৃত অর্থে নবীর শিক্ষা বোঝে ও মেনে চলে, তবে দ্বন্দ্ব নয়, ভ্রাতৃত্বই প্রতিষ্ঠিত হবে।
মহানবীর (সা.) শিক্ষার আলোকে আমাদের সমাজে কী পরিবর্তন আনা জরুরি বলে আপনি মনে করেন?
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন মাওলানা আলী নাকী, প্রথমত, সত্যবাদিতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দুর্নীতি, বৈষম্য ও প্রতারণা দূর না হলে শান্তি আসবে না।
দ্বিতীয়ত, পারস্পরিক সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ব জাগ্রত করতে হবে। ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাইকে সমান মর্যাদা দিতে হবে।
তৃতীয়ত, শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। নবীজি বলেছেন—"জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ।" শিক্ষা সমাজকে আলোকিত করে এবং অশান্তির পথ রুদ্ধ করে।
সবশেষে, ক্ষমাশীলতা ও সহনশীলতা চর্চা করতে হবে। বিদ্বেষ দূর হয়ে কেবল ভালোবাসা থাকলেই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
শেষে পাঠক ও শ্রোতাদের জন্য আপনার বিশেষ বার্তা কী হবে?
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন মাওলানা আলী নাকী, আমার বার্তা হলো-আমরা যেন মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা কেবল মুখে নয়, বাস্তবে জীবনে ধারণ করি। পারিবারিক জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়ন করি। যদি তা সম্ভব হয়, তবে দুনিয়াতে শান্তি আসবে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে, আর মানবকল্যাণই হবে আমাদের সবার বিজয়ের চূড়ান্ত প্রতীক।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: মাজিদুল ইসলাম শাহ
আপনার কমেন্ট